আপনার নিজের সম্পর্কে কিছু বলুন পড়াশুনা কাজকর্ম জন্ম স্থান?
আমার জন্ম চট্টগ্রামে, বড় হয়েছিলাম প্রথম কক্সবাজারে ও এর পর চট্টগ্রামে। ২০১০ এ এ লেভেল শেষ করে ২০১১তে গিয়েছিলাম যুক্তরাজ্যে এমবিবিএস করতে। এমবিবিএস কমপ্লিট করে ২০১৭তে ডাক্তার হই। এখন ইমার্জেন্সি মেডিসিন স্পেশাল্টিতে রেসিডেন্সি এবং একি সাথে কাজ করছি লন্ডনেই।
আপনার ভ্রমণের এই বিশাল সংখ্যাটি কীভাবে সম্ভব হলো?
আমার বাবা-মায়ের অনেক ভ্রমনপিপাসা ছিল। তাদের সাথেই প্রথম ১০টা দেশ দেখা। ২০১৬ সালে মেডিকেলের ৪র্থ ইয়ারে থাকতে প্রপারলি বেড়ানো শুরু করি। ইউরোপ ছোট ও ভাল কানেকশান থাকায় প্রথমে অনেক ঘুড়া যেত – যদিও অনেকবার সেংগেন ও অন্যান্য ভিসা নেয়া লেগেছিল। এর পর একবার শুরু হলে যা হয়, লেগে ছিলাম আলহামদুলিল্লাহ।
এত দেশ ভ্রমণের পেছনে মূল অনুপ্রেরণা কী ছিল?
এটা আসলে একটু অদ্ভুত। এক, আমি আসলেই পুরো দুনিয়া দেখতে চাই। ছোট বেলায় সব সময় ওয়ার্ল্ড ম্যাপ নিয়ে পড়ে থাকতাম, বিশ্ব ইতিহাস, ভুগল ও সংস্কৃতি নিয়ে জানার অনেক ইচ্ছা ছিল। দ্বীতিয় ছিল, ভ্রমন অভিজ্ঞতা। ২০১৬ সালে ইউরোপে এত এত রিফিউজি থাকায় তখন বেশ রেসিস্ট আচরনের শিকার হয়েছিলাম বর্ডারে। তখন থেকে বেশি বেশি ভ্রমনের ইচ্ছা জেগে উঠে – তারা যত কঠিন করবে, আমি তত বেশি বেড়াব ইন শা আল্লাহ।
২০২৪ সালে আপনি যে ৮টি নতুন দেশ ভ্রমণ করেছেন, তার মধ্যে কোন দেশটি সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ করেছে এবং কেন?কঠিন প্রশ্ন, ৩টা দেশের নাম বলি যেহেতু একটা বাছাই সম্ভব না- মৌরিতানিয়া, পাকিস্তান ও চীন
পুরনো দেশগুলোর মধ্যে (থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, সৌদি আরব) কোন দেশটির প্রতি পুনরায় ভ্রমণের কারণ কী ছিল?
সৌদি আরব গিয়েছিলাম উমরাহ করতে। সিঙ্গাপুর গিয়েছিলাম কারন সেখানে গিয়েছিলাম ৪ বছর বয়সে। আমার বাবার মৃত্যুর পর থেকেই চাচ্ছিলাম সেখানে একবার ফিরে যাই যেহেতু এক সাথে গিয়েছিলাম। থাইল্যান্ডে আমাকে আমন্ত্রন দেয়া হয়েছিল Extraordinary Travel Festival এ স্পিকার হিসেবে যেতে তাই যাওয়া। সাথে ক্রাবি আগে যাই নাই তাই দেখতে চেয়েছিলাম।
আপনার ভ্রমণ পরিকল্পনা কীভাবে তৈরি করেন?
আমার কাজের রোস্টার করা হয় ৬ মাসের। ওই সময় আমার ছুটি ও অফ ডে গুলা দেখে রাখি। সেটা দেখে আমি বেশ কিছু পরিকল্পনা করি – অনেকটা প্ল্যান এ বি সি টাইপের। চুড়ান্ত করি সাধারনত ট্রিপের ৫-৬ সপ্তাহ আগে। অনেক অনেক পড়ি এক একটা ডেস্টিনেশান নিয়ে যাওয়ার আগে।
বাজেট এবং সময় ব্যবস্থাপনা কীভাবে করেন?
আমি ভ্রমনের মাঝে মাঝে সময় অনেক অনেক বেশি করি যাতে বাজেট রেডি হয়। তাও একটু অনিয়ম হয় মাঝে মাঝেই। সময় ঠিক করি ছুটি দিয়ে।
ভ্রমণে গিয়ে কোনো দেশ বা স্থানে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন কি?হয়ে থাকলে কীভাবে তা সামলেছেন?
একটা দিয়ে বলা কঠিন। চ্যালেঞ্জ প্রায় প্রতি ট্যুরেই কম বেশি হয়। এক দুইবার পুলিশ নিয়ে ঝামেলা হয়েছিল, বাট আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ পার করে দিয়েছে।
আপনার ভ্রমণ অভিজ্ঞতায় সবচেয়ে আতিথেয় এবং বন্ধুত্বপূর্ণ দেশ কোনটি ছিল?
পাকিস্তান, ক্যাম্বোডিয়া, লাওস, বসনিয়া, পেরু, গাম্বিয়া এগুলা কে বলব
কোন দেশটি আপনার প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি? এর কারণ কী বলে মনে করেন?
আমি কোন দেশ নিয়ে হতাশ হইনি। কিছু দেশ হয়ত দুবার যাব না, কিন্তু সব জায়গায়ই কিছু না কিছু পেয়েছি। একমাত্র খারাপ এক্সপিরিয়েন্স ছিল বুলগেরিয়া যেখানে সবাইকে রুড মনে হয়েছিল। কিন্তু দেশটা নিজে অনেক সুন্দর আর অনেক ইতিহাস সেখানে তাই এই এক স্মৃতি দিয়ে খারাপ বানাতে চাইনা।
ভ্রমণের সময় স্থানীয় সংস্কৃতি, ভাষা, বা খাদ্য নিয়ে কোনো মজার অভিজ্ঞতা হয়েছিল কি? এত ভ্রমণের মধ্যে কোন মুহূর্তটি সবচেয়ে স্মরণীয় বলে মনে হয়? কেন?
অনেক অনেক অভিজ্ঞতা আর অনেক কিছুই স্মরনীয়। এক দুইটা বলে হবেনা।
মৌরিতানিয়া এবং লাওসের মতো তুলনামূলক কম পরিচিত দেশগুলোর সংস্কৃতি এবং মানুষ কেমন লেগেছে?
মৌরিতানিয়া বেশ ধার্মিক মুসলিম দেশ যদিও তাদের সংস্কৃতি বেশ ভিন্ন। ৭০-৮০% মানুষ কোরআনের হাফেজ। কিন্তু সেখানে ডিভোর্স বেশ কমন এবং মহিলারা ডিভোর্স হলে পার্টি দেয় মেয়ে ঘরে ফিরে আসার। মরুভুমিতে অনেকেই একদম আগেকার দিনের মত থাকতে পছন্দ করে যদিও অনেকের টাকা পয়সা আছে। মানুষ মারাত্মল অতিথিপায়ন করে। খুবি সেইফ। গরীব হলেও কোম চুরি হয়না।
লাওস বেশ ধার্মিক বৌদ্ধ একটা দেশ। বৌদ্ধ ধর্ম তাদের জন্যে অনেক গুরুত্বপুর্ন। ড্রাইভার, গাইড, হোটেল স্টাফ সহ অনেকের সাথে পরিচয় হয়েছে যারা জীবনের কয়েক বছর কেয়াং এ সন্নাশি হিসেবে ছিল। মানুষ গুলো খুবি ভাল ও হাম্বেল।
আপনার ভ্রমণে নিরাপত্তার কোনো সমস্যা হয়েছিল কি? হলে তা কীভাবে মোকাবিলা করেছেন?
আলহামদুলিল্লাহ এ পর্যন্ত মেজর কোন সমস্যা হয়নাই। অনেক দেশে গেছি যেগুলা অনিরাপদ কিন্তু ঝামেলা হয়নাই।
কোন দেশের খাবার আপনার সবচেয়ে প্রিয় লেগেছে? এবং কোন খাবারটি একেবারেই পছন্দ হয়নি?
প্রিয় খাবার জার্মানির তুর্কি খাবার। তুর্কি জনগোষ্ঠি অনেক বছর থাকতে থাকতে তাদের জার্মানিতে খাবারের স্টাইল অনেক ভিন্ন হয়ে গেছে। কেনিয়ায় খাবার বেশি ভাল লাগেনাই।
ভ্রমণের সময় সবচেয়ে অপ্রত্যাশিত ঘটনা কী ঘটেছিল?
একবার সেনেগালে ৫ ঘন্টা জেলে রেখেছিল ইমিগ্রেশানে। একবার বাস মিস করেছিলাম ক্রোয়েশিয়াতে, কিন্তু বাস কম্পানির ম্যানেজার বলল সে গাড়িতে আমাকে গন্তব্যে পৌছে দিবে বাস টিকেটের প্রাইসেই।
আপনার মতে নতুন ভ্রমণকারীদের কোন তিনটি গুণ থাকা প্রয়োজন?
– ধৈর্য্য
– ভিন্ন কালচারের প্রতি সম্মান
– সব সময় একটা পজিটিভ আউটলুক থাকা
আপনি কি একা ভ্রমণ করেন, নাকি কোনো গ্রুপের সঙ্গে?
একা অথবা স্ত্রীর সাথে।
একা ভ্রমণের অভিজ্ঞতা কেমন?
একা ভ্রমনের অভিজ্ঞতা মারাত্মক। সময়ে অনেক বরকত থাকে যেহেতু আমি অনেক হাই পেসে ঘুড়তে পছন্দ করি। সুর্যদয় থেকে সুর্যাস্ত পুরা টাইম ঘুড়ি, প্রেফার করি কোন লাঞ্চ ব্রেক ও না নিতে।
যেসব দেশে বারবার গিয়েছেন, সেসব দেশে আবার ভ্রমণের পরিকল্পনা আছে কি?
প্রায় ৩০টা দেশে মনে হয় একাধিকবার গিয়েছি। কিছু দেশে আসলেই বারবার যেতে চাই যেমন পর্তুগাল, ইতালি, তুর্কি, পেরু
ভ্রমণের সময় প্রযুক্তি কীভাবে আপনাকে সাহায্য করে?
বিশেষ কোনো অ্যাপ বা টুল ব্যবহার করেন?
প্রচুর এপ ব্যবহার করি। আজকাল ই-সিম কিনি airalo থেকে। গুগল ম্যাপ, বিভিন্ন ট্যাক্সি বা বাইকের এপ যেমম উবার, বোল্ট, কারিম, গ্র্যাব, ইয়ান্ডেক্স ইত্যাদি খবর নেই প্রতি দেশের। দেশ থেকে দেশ ভ্যারি করে কি ব্যবহার করি। ফ্লাইট দেখি স্কাইস্ক্যানার ও মমন্ডো তে। আজকাল ট্রিপ ডট কম ব্যবহার করছি অনেক। বুকিং ডট কম ও ব্যবহার করি।
প্রথমবার বিদেশ ভ্রমণকারীদের জন্য কী গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দেবেন?
বেশি স্ট্রেস নিবেন না। পর্যাপ্ত প্ল্যানিং করবেন কিন্তু প্ল্যানের এদিক ওদিক হলেও সমস্যা নাই। বাজেট বুঝে নিবেন, এনাফ এক্সট্রা টাকা নিবেন।
ভ্রমণে সবচেয়ে ভালো এবং বাজে অভিজ্ঞতার উদাহরণ দিতে পারবেন?
ভাল অভিজ্ঞতা অনেক অনেক। অধিকাংশ বাজে অভিজ্ঞয়া বর্ডার অথবা ইমিগ্রেশানে। একবার সেনেগালে ৫ ঘন্টা ইমিগ্রেশান জেলে আটকে রেখেছিল কোন কারন ছাড়া।
আপনার ভবিষ্যৎ ভ্রমণ পরিকল্পনা কী?
ট্রাভেল আরো স্লো করছি। বছরে ৪-৫টা ট্রিপ হবে ইন শা আল্লাহ কিন্তু স্লো করব এটা চাই।
এমন কোনো দেশ আছে যা এখনো আপনার তালিকায় রয়েছে?
১২৬টা গিয়েছি মানে ৭২টা এখনো বাকি, তাই অনেক কাজ আছে এখনো!